বাংলার মরমী সাধনায় হাসন রাজার গান : বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্মারক

আমরা যে মরমী কবি হাসন রাজাকে (১৮৫৪-১৯২২) চিনেছি, জেনেছি, তাঁর লেখা ও সুরকরা গান করি সেটা আমাদের কবি হাসন রাজা’র একেবারেই সাধারণ পরিচয়। যে কবিত্ব কিংবা যে ভাবনা তাঁর উপর ভর করার ফলে তিনি জীবন বোধের মর্মমূলে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন, মানুষকে তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে নতুন পথের সন্ধান দিতে পেরেছিলেন, তিনিই হলেন প্রকৃত হাসন যিনি মানুষের মনের ও বাঙালির দর্শন চেতনার রাজ আসনে অধিষ্ঠিত আছেন। তবে হাসন রাজা একদিক থেকে একটু ব্যতিক্রমি তা হল- সে সময়কার জমিদারদের মধ্যে গান শোনা ও এর জন্য পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি প্রায় সবার ক্ষেত্রে চোখে পড়লেও নিজে গান লিখে, সুর করে, মানুষের জন্য পরিবেশনা বিষয়টি একেবারেই একটু অন্যরকম।

সাদা চোখে আমরা যাকে গান বলি হাসন রাজার বেলায় বা তাঁর সৃষ্ট সুর-কবিতার ক্ষেত্রে কতখানি প্রযোজ্য সে বিষয়ে অনেক ধরণের আলোচনা হতে দেখা যায়। কেউ বলেন এগুলো কবিতা, কেউ বলেন গান, কেউ বলেন এগুলো তাঁর সৃষ্টিকর্ম, তবে একটি বিষয় আমাদেরকে বেশি করে ভাবিয়ে তোলে কিংবা নাড়িয়ে দেয় যখন কেউ বলেন এটি আসলে সুর ও কবিতার মাধ্যমে মানুষ কিংবা জীবন সম্পর্কে তাঁর একান্ত উপলব্ধি। প্রকৃতি ও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে তিনি জীবনকে নানাভাবে উপলব্ধি করেছেন। মানুষ হিসেবে মানুষের উপলব্ধিগুলোকে নিজের কথায় উপস্থাপন করেছেন।

মরমী কবি হাসন রাজা তাঁর গানে বা গীতিকবিতার মাধ্যমে এর সঠিক প্রকাশ করতে সক্ষম বলেই মানুষের মনকে নাড়া দিতে পেরেছেন তাঁর জীবনবোধ, জীবনের অভিজ্ঞতা মধ্য দিয়ে। মরমী মতে সাধক ও পরমের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বশর্ত হলো প্রেম। যে প্রেম হাসন রাজাকে এবং তাঁর ভাবনার জগৎকে পরমের প্রতি উৎসর্গীকৃত মরমী সাধনায় মগ্ন হতে সহায়তা করেছিল।

সাধক হাসন রাজা বলেছেন- ‘প্রেমের বাজারে বিকে মানিক ও সোনা রে, যে জনে চিনিয়া কিনে লভ্য হয় তার দুনা রে। সু-বুদ্ধি ও সাধু যারা প্রেম বাজারে যায়রে তারা, অথবা প্রেম বাজারে মিলে রতœ ভব বাজারে নাই। সাধুজনের প্রেম জগতের শুদ্ধ প্রেমিক কবি হাসন রাজা। জাগতিক মোহ, প্রেম থেকে আতœাকে মুক্ত করে পরমাত্মা মূখী প্রেমে নিপতিত হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বাংলার মরমী সাধনার পথিকৃৎ কবি ও সাধক।

বৈরাগ্য ভাবটিই জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলনের আকাঙ্খাকে প্রবল করে তোলে। তবে এক্ষেত্রে একদিকে জাগতিক মোহ হতে মুক্তি লাভের আনন্দ অন্য দিকে পরমকে পাওয়ার জন্য বাসনা প্রবল “কি ঘর বানাইমু আমি শুন্যের মাঝার অথবা মন যাইবাই রে ছাড়িয়া কেহ নাহি পাইবে তোমায় সংসারও ঢুড়িয়া। কোথায় রইবো ঘরবাড়ী কোথায় রইবো সংসার, কোথায় রইবো লক্ষণশ্রী নাম পরগণা রে”। হাসন রাজার এসকল বাণীর মাঝে ক্ষণস্থায়ী এই জাগতিক মোহ হতে মুক্তির আকাঙ্খার প্রতিফলন। কবি তাঁর বাণীতে বলেছেন- ‘আমি আমি বলে যারা, বোঝেনা বোঝেনা তারা, লাইগাছে সংসারী বেড়া, মূর্খতা ছুটিছেনারে’। আমার বলতে কিছু নেই কারণ আমিও কারো না কারো সৃষ্টি। এই মর্মবাণীর মাধ্যমে মরমী সাধকগণ মানুষকে মূলত ভালবাসার পথে আহবান করেছেন। আত্মা ও পরমাত্মার মিলনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি আমি হতে সামগ্রিক আমি’তে রূপান্তর হাসন রাজার গানের মরমি সাধনার এক অভিনব ব্যঞ্জনা। সেখানে ব্যক্তি আমি পরম আমির মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। হাসন রাজার ভাষায়- ‘আমিই মূল নাগর রে আসিয়াছি খেইর খেলিতে ভব সাগরে, আমি রাধা আমি কানু আমি শিব-শঙ্করী, অধর চাঁদ হই আমি আমি গৌর হরি রে, আমি মূল আমি কূল আমি সর্ব ঠাই, আমি বিনে এ সংসারে আর কেহ নাই’ ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসন রাজার গানের উদ্ধৃতি টেনে তাঁর বক্তৃতায় দেখিয়েছেন মানুষকে বা ব্যক্তি-আমিকে সামগ্রিক আমির সাথে একাকার করে জীবনের এক প্রসারিত ভাবনা। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর তুমি তাই এসেছো নিচে, আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর তোমার প্রেম হতো যে মিছে’। মনের ভাবনা কিংবা সাধনলোকে অথবা চেতনায় তিনি রূপ দেখেছেন। ‘রূপ দেখিলাম রে নয়নে আপনার রূপ দেখিলাম রে, আমার মাঝত বাহির হইয়া দেখা দিল আমারে’। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মরমী কবি হাসন রাজার পরম ভাবনা নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তর বর্ণনা করবো বলে আমার আগ্রহ রয়েছে।

সুরমা নদীর তীরে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে হাসন রাজা বেড়ে উঠেন। “জন্মের পর থেকেই মা হুরমতজান বিবি যক্ষেরধনের মতো একমাত্র শিশুপুত্রকে আগলিয়ে রাখতেন। চারপাশে মানুষের সহচর্যময় হাসন রাজার বাল্যকালটি ছিল ছবির মতো রঙিন। একদিন মা হুরমতজান বিবি একজন পরিচারিকাকে ডেকে বললেন শিশু হাসন রাজাকে সুরমা পাড়ে নিয়ে খোলা বাতাস খাইয়ে আন। ঘরের মধ্যে বদ্ধ হাওয়ায় হাসন রাজার হাপিয়ে ওঠার থেকে সুরমার খোলা হাওয়া যে সে পছন্দ করতে পারে এটা তার মায়ের বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি। হাসন রাজা পরবর্তীতে তার নিত্যদিনের সহচর ‘উদাই’ জমিদারের কাছে এ বিষয়টি সম্পর্কে বলেছেন- সেদিন যখন সুরমা পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তার কাছে সেদিনের আবছা জগৎটা ছিল অনেক বড়”।

প্রকৃতির সাথে হাসন রাজার এই প্রথম পরিচয়। দিগন্ত বিস্তৃত এক আলোর ছোঁয়া যেন তার চোখে মুখে এসে লাগে। সুরমার উত্তর-পশ্চিম দিগন্ত জুড়ে হেলান দেয়া খাসিয়া পাহাড় বালক হাসন রাজাকে আরো অবাক করে তোলে। প্রায়ই হাসন রাজা সুরমা পাড়ে বসে খাসিয়া পাহাড়ের দিগন্ত ছোঁয়া অপরূপ সুন্দরের দিকে চেয়ে থাকতো। শিশুকালেই সুনামগঞ্জের মাটি, মানুষ আর প্রকৃতি এই তিন মিলে হাসন রাজার চিন্তা, চেতনা, ভাবনা, আর ভাষার সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক শিল্প মানষপট তৈরিতে যথার্থ ভূমিকা পালন করেছিল। ‘এর পরপরই প্রায় বাল্যকালেই তার মধ্যে কবি প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ‘সৌখিন বাহার’ এর কাব্য গাঁথুনি সেই সময়েই শুরু বলে অনেকে মনে করেন’।

হাসন রাজার দর্শন ও চিন্তা শক্তির বিকাশ এবং তার প্রয়োগ নিয়ে সমালোচক, গবেষকগণ নানা ধরনের তথ্য প্রদান, মতামত প্রকাশ করেছেন। “তাঁর সম্পর্কে এ ধরনের আলোচনায় বাৎসায়নের কামসূত্র ও বৈষ্ণর দর্শনের দেহাত্মবাদের সাথে তুলনা করে একে ভোগবাদী দর্শনের সাথে তুলনা করেছেন। আবার আরেকদল গবেষক ও সমালোচকের মতে তার মূল দর্শনটি হলো রূপের মধ্যদিয়ে সন্ধান করে সত্যে উপনীত হওয়া। সেই রূপের সত্য অনুসন্ধানে তিনি সৌন্দর্য্য খুজেছেন জীবন, জগৎ আর মানবিক পরিমÐলে”।

মরমী কবি হাসন রাজা শুধমাত্র একজন কবি কিংবা গীতিকার না, হাজার বছরের বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর সৃষ্ট পয়ার ও পদগুলো এদেশের নিজস্ব পরিচয় প্রদানের জন্য অনন্য। তাঁর রচনায় এমন ঐতিহ্যময় প্রকাশ ঘটেছে প্রায় সকল ক্ষেত্রে। “মনে রাখতে হবে যে নবদ্বীপের শ্রীহট্ট পাড়ায় মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের পিতামাতা ও পরিজনেরা শ্রীহট্ট ত্যাগ করে চলে এসেছিলেন। শান্তিপুরের অদ্বৈত আচার্যের আদিনিবাসও এই শ্রীহট্ট জেলায়। এখানে শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, বৌদ্ধতন্ত্রাচার, যোগ ও লোকায়ত সাধনা মিলেমিশে একাকার হয়েছে”।

হাসন রাজার গানের সুরে, কথায়, দর্শনে ও মরমীভাব প্রকাশে তাঁর গানের সমৃদ্ধি ঘটেছে। এক অনুপম সৌন্দর্য্যবোধ আর রূপের সমন্বয় রয়েছে এখানে। তাঁর গানে রয়েছে আধ্যাত্মিক সুর ও কথার ব্যঞ্জনা। ‘হাসন রাজার জীবন ও সংগীত কর্ম’ প্রকাশক-মাওলা ব্রাদার্স-২০১৫ গ্রন্থে গবেষক ‘সামারীন দেওয়ান’ ধারাবাহিকভাবে এদেশের বিভিন্ন লেখকের বর্ননায় হাসন রাজার গানের ঐতিহ্যমূল্য নিরূপণ করার চেষ্টা করেছেন’।৫ হাসন রাজার সম্বন্ধে বিভিন্ন লেখকের রচনায় ঐতিহ্য চর্চার দিকগুলো উঠে এসেছে। লেখক ও হাসন রাজা প্রেমীগণ বাঙালীর অন্যান্য ঐতিহ্য বিচারের মতো হাসন রাজার গান এবং রচনাকে নানা মাত্রায় দেখার চেষ্টা করেছেন। সে বিষয়গুলোর মূল্য বিচারে এ প্রবন্ধে সে সকল বিষয় থেকে উল্লেখ করা হলো।

মধ্যযুগের মুসলিম সাহিত্যে সুফিবাদি, যোগতান্ত্রিক ও বৈষ্ণবধারার চিন্তাচেতনা এবং বঙ্গ ও শ্রীহট্টের গৌড়ীয় ভাব-আন্দোলন থেকে হাসন রাজার যে উত্তরন তার প্রেক্ষাপটে মরমী কাব্য ও সঙ্গীত গবেষনায় আরবী, ফার্সি ভাষার ঐতিহ্যময় সম্মেলক কবি হিসেবে হাসন রাজা প্রকাশিত হয়ে উঠেছিলেন।

বাংলা ভাষায় মরমিয়াবাদের সব থেকে বড় সাধক কবি হাসন রাজা ‘মরমি’ বা ‘মর্মী’ হৃদয়ে গূঢ় অর্থপূর্ন অনুভূত্রি দেখিয়ে দিয়ে শ্রষ্ঠার সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপনে এক বিশেষ মানবীয় অনুভূতি, মহিমাময় বোধশক্তি, বিষয়বুদ্ধির অধিকারী হয়ে তিনি মুক্তির প্রয়াস এবং সর্বোচ্চ মোক্ষমলাভের সাধনা করে গেছেন।

মানুষের মাঝে মানবতাবাদ, প্রেম প্রতিষ্ঠা এবং আত্মার প্রকৃত শুদ্ধি ও এই মুক্তির লক্ষ্যে ‘বৈষ্ণব সহজিয়া’ জীবনের আওতায় থেকে তিনি আবার বিশ্বের চিরন্তন অধ্যাত্মবাদ বা অতীন্দ্রিয় একক অন্বেষন মরমি চিন্তাধারায় ইসলামের রসুল মোহম্মদ (স:) অনুসারী হয়েও হাসন রাজা প্রাচীন গ্রীক তত্ত¡দর্শনে, বোদ্ধিক ও নৈতিক দায়িত্বের মাঝে থেকে ভাববাদী চিন্তার মাঝে ঘোরপাক খেয়েছিলেন। অতীন্দ্রিয় নিত্য সত্যকে নিয়ে এক একশ্বেরবাদী চিন্তা চেতনার বলয়ে এক বিরল মরমী স্বর্বেশ্বরবাদি সাধনায় তিনি রত ছিলেন।

আধ্যাত্মিক সাধনাই হলো মরমিয়াবাদের ভিত্তি। সহজ মানুষ, মনের মানুষ, মুনিয়া পাখি, কোড়া পাখি, বন্ধে, পেয়ারী ইত্যাদি নামে বৈষ্ণব, বাউল, মরমী সাধকদের সাধনায় তা প্রকাশ পেয়েছে। সব সময় মানুষই হয়েছে তাঁর গানের প্রধান উপজীব্য। অধ্যাপক আবুল ড. আবুল আহসান চেীধুরী বলেছেন- “‘সিলেট’ নাম উচ্চারণের সাথে সাথে এই এলাকাটিকে বাংলাদেশের ‘আধ্যাত্মিক হৃদয়’ বলেই মনে হয় । সেই সিলেটে বৌদ্ধ সহজিয়া, ইসলামী সুফিমত, বৈষ্ণব সহজতত্ত¡ এসবের সম্মিলনে যে সিদ্ধ-সাধনার পথ নির্মিত হয়েছিল, যে মরমি সাধনার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিলোÑসেই শ্রীহট্টের মাটিতে জন্ম নিয়েছেন শিতালং শাহ, সৈয়দ শাহনুর, আরকুম শাহ, রাধারমন, শেখ ভানু, দুর্বিন শাহ, রকিব শাহ, শাহ আব্দুল করীম প্রমূখ। এরকম অনেক মরমি মহাজন তাঁদের সঙ্গীতের সুবাদে যে মরমি জগত নির্মান করেছেন সেই মরমী বলয়ের কেন্দ্রে আছেন মরমি কবি, দার্শনিক কবি হাসন রাজা। হাসন রাজাকে আমরা শতাব্দির ‘মরমি ফুল’ বলতে পারি। লোকজ দর্শনকে যিনি তাঁর গানের ভিতর দিয়ে বাঙালির অন্তরে সঞ্চারিত করেছেন”।

হাসন রাজার জীবন সম্বন্ধে উপলব্ধির বিষয়টি প্রকাশে আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর রচনায় বলেছেন- এ পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ীত্বের কথা এনে তিনি মানুষ হিসেবে সৎ ও দায়িত্বশীল জীবনযাপনের কথা বলেন। সৃষ্টি ও ¯্রষ্টার প্রতি মানুষের দায়দায়িত্বের কথা তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে বাঙালী মানস্ আর মানবীয় গুনাবলী সম্পন্ন আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ হিসেবে হাসন রাজা হয়ে আছেন আমাদের অন্যতম ঐতিহ্যের স্মারক। বাঙালির মানস্পটে মরমী সাধনার প্রকৃত সাধক হিসেবে হাসন রাজা বিশ্ব ঐতিহ্যের এক অনবদ্য অংশ।

লোকায়ত জীবনে উপলব্ধি প্রকাশের একমাত্র ও সহজতর পদ্ধতি হল প্রেম। প্রেমের কারণে সাধক ও কবিগণ যুগে যুগে বৈরাগ্য সাধনায় মনোনিবেশ করেছেন। বৈরাগ্য শুধু আত্মার মুক্তি ও শান্তি প্রদান করে না, মানুষের মন থেকে লোভ-লালসা, হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার মত বিষয়াবলীকে একেবারেই দূরীভূত করে। হাসন রাজা প্রেমের মাধ্যমে সৃষ্টি ও ¯্রষ্টা উভয়েরই জয়গান করেছেন কোন পার্থক্য না দেখে। সৃষ্টির মাধ্যমেই যে মহিমায় ¯্রস্টার বহিঃপ্রকাশ তা তারই রূপ ভাবনার ফসল। ¯্রষ্টা ও সৃষ্টিকে তিনি কখনো কখনো এক করে দেখেছেন। বাংলার মানচিত্র ভেদকরে বয়ে চলা নদীগুলো এদেশের মাটিকে যেমন উর্বর করে তুলেছে তেমনি এখানকার মানুষের মনও হাজার বছরের বাঙালি চেতনায় বারবার আধ্যাত্মিক রসে সিক্ত হয়েছে। মরমী কবি হাসন রাজা তারই ধারাবাহিকতায় প্রেম, বৈরাগ্য আর অতিন্দ্রিয়ানুভূতির সংমিশ্রণে এদেশের মানুষের মনে যুক্ত করেছেন নব সাধনধারা, যাকে শুধুমাত্র গীতধারা কিংবা গীতরসের উপাদান হিসেবে ভাবলে এর মূল ভাবনালোকে প্রবেশ করা একটু দূরহই বটে। হাসন রাজা বাংলা সাহিত্য ও সংগীতধারার আদি কবিদের মতো একই পথে না হাটলেও তাঁর সৃষ্ট গীতিধারা কিংবা সাহিত্য সংগীতের মাধ্যমেই বিকশিত হয়েছে।



প্রফেসর ড. মো. জাহিদুল কবীর
সংগীত বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ