হাসন রাজা যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেন তখন মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন ছিল না এমনকি বাংলা পড়ালেখাও ছিল দু:সাধ্য। তখন অবস্থাপন্ন মুসলিম সমাজে আরবি, ফারসি ও উর্দু শিক্ষার রেওয়াজ ছিল। নিজবাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে পারিবারিক ঐতিহ্যস্বরূপ হাসন রাজা তার প্রাথমিক জীবনে র্ফাসি, বাংলা এবং আরবি ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। সৈয়দপুর নিবাসী আদম খাঁ নামে এক মৌলবি সাহেব ছিলেন আরবি বোগদাদী কায়দা এবং কুরআনুল-করিম পাঠের শিক্ষক। সাথে সাথে ফারসি ও উর্দু শিক্ষারও সুযোগ ছিল। বাংলা শিক্ষার জন্যে একজন পন্ডিতও ছিলেন। ছেলেবেলায় তার বাবা তাকে সিলেটের একটি মাদ্রাসায় প্রথমেই কিছু প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার জন্যে সিলেট শহরে পাঠিয়েছিলেন। যে মাদ্রাশায় হাসন রাজা মাত্র তিনটি বছর তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু ও ইতি টানলেন, তার নাম ছিলো সাইদিয়া মাদ্রাশা। এখানে তিন বছর কাটানোর পর মায়ের নির্দেশে তিনি লক্ষনশ্রীর ঘরে ফিরে আসলেন। মা চেয়েছিলেন, জমিদারী পরিচালনার দলিলপত্রাদি বিষয়ে দ্রুত জ্ঞান আহরণ করা।
তার সম্পর্কে যে ক’জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য পাওয়া যায়, তারমধ্যে তাঁরই কনিষ্ট পুত্র আফতাবুর রাজার মন্তব্য উল্লেখযোগ্য, ‘আমি আমার পিতা-সাহেবকে তাঁহার ৫০ হইতে ৬৮ বৎসর বয়স পর্যন্ত কাছ থেকে দেখিয়াছি। তিনি ঘরে বসিয়া বইপত্র পড়িতে অভ্যস্থ ছিলেন। বিশেষতঃ তাঁহার ৬০ বছর বয়সে একদিন আমার নজরে আসিল তিনি কলকাতারই প্রকাশিত একটি বাংলা খবরের কাগজ পড়িতেছেন। এখন স্মরণে আসিতেছে যে, পত্রিকাটি নাম ছিল ‘বন্দে-মাতরম’।’ বাংলাদেশের ঊনিশ শতকের শেষভাগের একজন স্বনামধন্য লেখক ও ঐতিহাসিক সৈয়দ মুর্তজা আলী লিখেছিলেন, ‘হাসন রাজা ছিলেন স্বভাব কবি। নশ্বর জগতের ভোগ-বিলাসের উর্ধ্বে ছিল তার দৃষ্টি। বিষয় বৈভবের মধ্যে থেকেও তিনি অনেকটা নির্লিপ্ত জীবন-যাপন করে গেছেন’। হাসন রাজার জীবনে শিক্ষাকে ঘিরে তার চিন্তা, ধ্যান-ধারণা কিংবা প্রেরণার উর্দ্ধে তাঁর মরমি কবি-খ্যাতি আর তাঁর সুনাম উপছিয়ে ওঠে। শিক্ষার অভাব অনুভব থাকা সত্তে¡ও ‘প্রথম থেকেই তার একটি নিমগ্ন ও নির্মোহ কবিচিত্ত ছিল, যার আলিঙ্গনে সমস্ত রস তার হৃদয়ে সঞ্চিত হয়েছে এবং বিবর্ণ হয়েছে তার পরিমন্ডল।’ এ প্রসঙ্গে কলকাতার লেখক অমিয়শঙ্কর চৌধুরী লেখেন, ‘তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যাবার সুযোগ মোটেই পাননি। কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যে সবারই অবশ্য কর্তব্য তা তিনি মুক্ত কণ্ঠে ঘোষণা করতেন।’ আবু আলী সাজ্জাদ হোসেইন লেখেন ‘১৮৭৭ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠার পরপরই মরমী কবি হাসন রাজা কর্তৃক সুনামগঞ্জে হাসন এম.ই. স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জনৈক প্রমদা রঞ্জন আচার্যকে ঢাকা থেকে এ স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক করে আনা হয়।’ এই স্কুল প্রতিষ্ঠায় হাসন রাজা জায়গা ও অর্থ সরবরাহ করেন। ৯ বছর স্কুলটি চলার পর ১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসন আরোহনের পঞ্চাশ বছরপূর্তী উপলক্ষে গোল্ডেন জুবিলী উৎসব উদ্যাপন করা হয়। ঐ সময় সিলেটের প্রথম ডেপুটি কমিশনার মি. এ.এল. ক্লে হাসন রাজাকে অনুরোধ করে তার প্রতিষ্ঠিত হাসন মিডিল ইংলিশ স্কুলটির উপর একটি পরিপূর্ণ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠান। হাসন রাজা এতে রাজি হলে ‘সুনামগঞ্জে এ উপলক্ষে বিরাট উৎসবের আয়োজন করা হয়। জুবিলী উৎসব চিরদিন স্মরণ রাখার জন্যেই সুনামগঞ্জে জুবিলী হাইস্কুল স্থাপন করা হয়।’
কলকাতার লেখক প্রভাতচন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন ‘সুনামগঞ্জের জুবিলী হাই স্কুলের নতুন বাড়ি তৈরির জন্যেও তিনি বিস্তর জমি দান করেছিলেন।’ এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, তার মাইনর স্কুলটিকেই জুবিলী হাই স্কুলে উন্নিতকরণে হাসন রাজার অবদান ছিল। ব্রিটিশ শাসকদের প্রতিষ্ঠিত ও বর্ধিত ‘সুনামগঞ্জ জুবিলী হাইস্কুল’ এর পিছনে যে মূলতঃ হাসন রাজার শিক্ষা প্রসারের একটি তীব্র অভিপ্রায় জড়িত ছিল তা স্পষ্টত বুঝা যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ২১ ডিসেম্বর ২০১২ সালে জুবিলী স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজকরা এ স্কুলের সাথে হাসন রাজা জড়িত থাকার প্রসঙ্গটি একেবারে এড়িয়ে যান। কোন হীনমন্যতার কারনে নিজেদের গর্বিত ইতিহাস ঐতিহ্যকে অসম্মান করার প্রবনতা পরিলক্ষিত হয়।
বিলেতি আমেরিকান গবেষক এডওয়ার্ড ইয়াজজিয়ান বলেন After reading Hasan Raja’s songs, I was left wondering where a barely literate person absorbed such sophisticated philosophical ideas. Knowledge of this sort is usually obtained by a combination of learning from a teacher (guru/murshid), book knowledge, and personal realization.’ আর এজন্য বলতে হয় হাসন রাজার দার্শনিক ও শিক্ষা অর্জন বিষয়ক চিন্তাধারার পিছনে যে স্পৃহা গভীরভাবে কাজ করেছিল তার সাক্ষর সুস্পষ্টভাবে জুবিলী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে রয়েছে। হাসন রাজার হাত ধরে সুনামগঞ্জে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার নতুন যুগের সূচনা।
হাসন রাজার ভাবনা ছিলÑ এলাকার মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যাক। শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ছিল বলেই হাসন রাজা পারিবারিক জীবনে নিজ পুত্রগণ এবং ভাতিজাদেরকে পড়াশোনা করানোর জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। প্রথম ভাতিজা আবুল হোসেইন, দ্বিতীয় ভাতিজা আজিজুর রাজা এবং নিজ দ্বিতীয় পুত্র হাসিনুর রাজাকে কলকাতা ইটালি মুল্লা পাড়াস্থ হাই কোর্টের উকিল নূর উদ্দিনের শশুরের বাড়িতে রেখে পড়াশোনার করানোর উদ্দেশ্যে তিনি এদেরকে পাঠিয়েছিলেন। ১৮৮৬ সালে নিজ পুত্র দেওয়ান গনিউর রাজাকে তিনি সিলেট দরগা মহল্লায় গভর্ণমেন্ট স্কুলে ভর্তি করে দিন। বোন সঈফা বানুর তত্ত¡াবধানে কুয়ার পারের বাসায় থেকে তিনি কয়েক বছর সিলেটে লেখাপড়া চালান। গনিউর রাজাকে ১৪ বছর বয়সে ঢাকায় পাঠানো হয় পড়াশুনার উদ্দেশ্যে। এতে খুবই স্পষ্ট বুঝা যায় যে হাসন রাজা নিজে পড়ালেখা না করলেও তার বংশধরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলার একটি প্রবল ইচ্ছা ও চেষ্টা ছিল। পরিবারের বাইরে হাসন রাজা অসংখ্য স্থানীয় ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যান। এক্ষেত্রে মুসলিম ও মুমিনের নাম বহু লেখকের লেখায় উল্লিখিত রয়েছে।
হাসন রাজা তাঁর সহজিয়া জীবনের সবচাইতে দু:খজনক দিক হলো বার বার তাঁর আপনজনের মতো মানুষগন, যেমন স্ত্রীগন বিয়ের পরপর বছর তিন কি চার এর মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের অতি অল্পকালে মারা যেতেন।
এইভাবে পরপারে ছয়জন স্ত্রীকে হারিয়ে সর্বকনিষ্ট স্ত্রী লবজান চৌধুরীকে হাসন রাজা নব-স্ত্রী হিসেবে ঘরে নিয়ে আসলেন। তাঁর থেকে অর্ধেকের চাইতের কমবয়স্ক লবজান চৌধুরীকে বিয়ে করে দীর্ঘ ২৭ বছরের সুখের জীবনকাল কাটাতে পেরেছিলেন। দীর্ঘ এই সহবাস এবং সান্নিধ্যের কারনেই লবজান চৌধুরী তাঁর গর্ভে এক পুত্র সন্তান লাভ করেন এবং তাঁরই যে সমস্ত বংশধরগন পরম্পরায় জন্ম গ্রহন করেছিলেন তাঁদেরই অনেকে এখন পর্যন্ত হাসন রাজার জন্ম-ভিটেতে বসবাস করছেন এবং তাঁরাই তাঁর জীবন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী অবহিত থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। লেখক আমি নিজেও এই লবজান চৌধুরীরই বংশপরম্পরায় চতুর্থ বংশধর পুরুষ। এই গুনসম্পন্না মহিলা তাঁর খ্যাতিপূর্ন স্বামী হাসন রাজার এতখানি অন্তরের মানুষ ছিলেন যে তাঁকে অফুরন্ত সেবা-সুশ্রসা দান করতে জীবনে এতটুকু কার্পন্য করেননি। হাসন রাজাও শেষের স্ত্রীকে শেষদিন পর্যন্ত খুব ভালবাসতেন এবং দোয়া করতেন। ইহকালে পাড়ি দেয়ার আগ পর্যন্ত লবজান চৌধুরানির সেবাদান ও ভালোবাসার ছোয়াছে তিনি স্বস্থি ও শান্তি পেতেন। সে কারনেই শেষ নিঃশাস্ব ত্যাগ করার আগে তাঁর কনিষ্ট পুত্র আপ্তাবুর রাজা চৌধুরীকে হাসন রাজা আদেশ দিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর মা লবজান চৌধুরীর নামে যেনো একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় গড়ে উঠে। নারী শিক্ষার গুরুত্ব হাসন রাজার কাছে এতখানি ছিলো যে সে কারনেই হয়তো ছেলে আপ্তাবুর রাজাকে এই উপরোক্ত নসিয়তটি দিয়ে গিয়েছিলেন। স্কুলটির জন্যে জায়গাটি বরাদ্ধ করে যান আপ্তাবুর রাজা এবং তস্য পুত্র অর্থাৎ হাসন রাজার নাতি দেওয়ান আনোয়ার রাজা এই স্কুলটি প্রতিষ্টা করেন ১৯৪৩ সালে। এই স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন শরাফত আলী মাস্টার সাহেব এবং পরবর্তীকালে এই স্কুলটিকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আরেকজন প্রধান শিক্ষক হিসাবে মোর্কারম আলী পীরেরও অবদানও কম ছিলো না। সম্প্রতি আনোয়ার রাজার প্রথম পুত্র দেওয়ান সামছুল আবেদীন অত্র স্কুলের কমিটি সভাপতি হিসেবে দাবী করছেন তিনিই লবজান হাই স্কুলের প্রতিষ্টাতা। আমি এই প্রবন্ধের লেখক হিসেবে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হলাম যে স্কুলটি আসলেই ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্টিত হয়েছিলো। এখন আমার প্রশ্নটি হলো আমার বড় ভাই দেওয়ান সামছুল আবেদীন সাবেক এমপি সাহেবের জন্ম যদি হয়ে থাকে ১৯৪৪ সালে, তাহলে কি করে তিনি জন্মের ঠিক এক বছর আগেই প্রতিষ্টাতা সভাপতি হয়ে দাড়ান। পিতার অবদানকে কি খাটো করার জন্যে ? তবে সত্যের মহাসত্যটি হলো এখনো সুনামগঞ্জ এলাকায় প্রতিষ্টিত ‘লবজান চৌধুরী উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে’ লবজান চৌধুরীকে এবং পরোক্ষভাবে হাসন রাজাকে অমর করে রেখেছে। আর এই স্কুলের সত্যিকারের প্রতিষ্টাতা হলেন আমার বাবা দেওয়ান আনোয়ার রাজা চৌধূরী।
শিক্ষার প্রতি হাসন রাজার অগাধ এক শ্রদ্ধাবোধ ছিলো। ১৯১৯ সালের দিকে হাসন রাজা তাঁর পুত্রগনকে এই অসিয়ত করে যেতে ভুলেন নি যে শিক্ষা প্রসারেও যা যা করনীয় সবকিছু যেনো পুত্রগন ও বংশধরগন করে যান। ব্রিটিশ নির্মিত টাউন হলের ভিতর ব্রিটিশ-রাজ আমলের পরবর্তীকালে বেসরকারীভাবে সুনামগঞ্জ কলেজ প্রথম গড়ে উঠে। এরপর ১৯৬১ সনে হাসনরাজার নাতি দেওয়ান আনোয়ার রাজার দানকৃত জায়গাটিতে সেটি স্থানান্তরিত হয়। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রসঙ্গে সাংবাদিক মকবুল হোসাইন চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান সুনামগঞ্জের স্বনামধন্য উকিল ও সাংবাদিক হোসেন তৌফিক চৌধুরী জানান, ‘আমার ছাত্রজীবনে কলেজের লেখাপড়া যখন শুরু করি তখন স্থানান্তরিত বর্তমান হাসননগর-স্থিত সুনামগঞ্জ কলেজের আমি ছিলাম প্রথম ব্যাচের ছাত্র। কলেজে আমাদের ব্যাচটির ভর্তি-পর্ব শেষ হয়েছিল সুনামগঞ্জ শহরের মধ্যখানে অবস্থিত কলেজের পুরানো বিল্ডিং এ। স্থানান্তরের পর আমরা ১৯৬১ সনের ২৮ অগাষ্টে হাসন নগরে নতুন তৈরি কলেজ স্থিতিস্থলে ক্লাস শুরু করি। আমার মনে পড়ে এর আগে সুলতানপুর মৌজার হাসননগর এলাকার এই জায়গাটিতে হাসন রাজার নির্দেশ-অনুযায়ী তার কনিষ্ঠ পুত্র দেওয়ান আপ্তাবুর রাজার প্রতিশ্রæতি পালনে তাঁরই পুত্র (হাসন রাজার নাতি) দেওয়ান আনোয়ার রাজা আনুষ্টানিকভাবে তখনকার সময়ের সুখ্যাত এস.ডি.ও নিজাম সাহেবের কাছে পুরো ১৪ কেয়ার (৪.৫০ একর) জায়গা সুনামগঞ্জ কলেজের নামে হস্থান্তর করে দেন। সেই হস্থান্তর অনুষ্ঠানে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম’। এর প্রমাণ মেলে দেওয়ান আনোয়ার রাজার রোজনামচায়। তিনি জানান, ‘বাবার এই প্রতিশ্রæতি আমি সম্পাদন করি, কেননা তাঁহার বাবা দেওয়ান হাসন রাজার কাছে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন যে সুনামগঞ্জে শিক্ষা বিস্তারে জায়গা-সম্পদ এবং অর্থ দিতে যেনো পরিবারের কেউ কার্পন্য না করেন। দাদার এই শিক্ষানুরাগটি আমাকেও সবসময়ই তাড়না করিয়াছে। কিভাবে এই এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াইয়া দেওয়া যায়’।
১৯৬২ সনে কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচে পড়াশুনা করেছেন বাংলাদেশের সুবিখ্যাত সাংবাদিক কমনওয়েল্থ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি হাসান শাহরিয়ার এবং আমার সহোদর প্রাক্তন পার্লাম্যান্ট মেম্বার দেওয়ান শামছুল আবেদীন। তাঁদের কাছ থেকেও উপরের অনুরূপ তথ্যাদি খুঁজে পাওয়া যায়। অন্যদিকে আমেরিকান লেখক ও গবেষক এডওয়ার্ড ইয়াজাজিয়ান তাঁর গ্রন্থে হাসন রাজার কথা লিখতে গিয়ে বলেন যে In his later years he regretted his lack of schooling and donated quite a bit of his wealth for the education of those who could not afford it. He also supported the education of women which for that time and place was unusual. ‘হাসন রাজার শেষ বয়সে তার স্কুলজীবনের অভাব ভেবে দুঃখ প্রকাশ করেন, আর সেজন্যে এতবেশি আর্থিক অনুদান তিনি শিক্ষা প্রসারে দিতে পেরেছিলেন। নারী শিক্ষা প্রসারে তার অবদানের কথা তখনকার সময়ের জন্যে সত্যিই অস্বাভাবিক’। হাসন রাজা প্রায়ই খুব গর্বভরে শিক্ষিত নারী, সম্মানিত নারী হিসাবে তার বোন সঈফা বানুকে স্মরণ করতেন।
১৯২০ সনে হাসন রাজা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই সময় চিকিৎসার আশায় তিনি সিলেট সফরকালে অবস্থান নিয়েছিলেন শেখ ঘাটের সেই কুয়ারপারের বাড়ি, তাঁর একমাত্র বোনের স্মৃতিবিজরিত আবাসস্থলে। এই সময় বাড়িটি ছিল তার তৃতীয় পুত্র একলিমুর রাজার তত্ত¡াবধানে। আর সেজন্যেই সৈয়দ মুর্তাজা আলী নির্দিষ্ট করে বলেছিলেন যে ঐ বাসা বাড়িটিতেই যখন হাসন রাজাকে দেখতে যান, এবং কবির কাছে এম,সি কলেজ লাইব্রেরীর জন্যে নুতন বই পত্র কিনার উদ্দেশ্যে চাঁদা সংগ্রহের কথা পাড়লেন, হাসন রাজার শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদানে মুর্তজা আলীকে তিনি নিরাস করলেন না যদিও তখন কবি অসুস্থ অবস্থায় শায়িত ছিলেন। সিলেটে এসে যে চিকিৎসা লাভ করলেন তা তার শরীরের জন্যে কিছুতেই কাজ দিল না। সেদিন যখন তাঁর বোন সঈফা বানুর সিলেটের বাসগৃহ থেকে বাহির হয়ে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দিন তখন তাঁর মন স্বাস্থ্য নানান কারনে ভেঙ্গে চৌচির অবস্থা।
সহায়ক গ্রন্থসমূহ ও সাক্ষাৎকার
১. “ মরমি কবি হাসন রেজা”, দেওয়ান মোহম্মদ আজরফ
২. “সুনামগঞ্জ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য” আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন
৩. সাবেক চৌধুরীগনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস খান বাহাদুর দেওয়ান গনিউর রাজা ১৯২৮
৪. গানের রাজা হাসন রাজা, প্রভাতচন্দ্র গুপ্ত, মুক্তধারা, ১৯৮৫, ঢাকা
৫. হাছন রাজার সঙ্গীতমালা, অমিয়শঙ্কর চৌধুরী, বিপ্লব দাশ ক্যাম্প প্র্রকাশিত, ১৯৯৯, কলকাতা
৬. Y. Edward, 100 Songs of Hason Raja, Pathak Shamabesh, Dhaka, Bangladesh, ১৯৯৯
৭. প্রকাশিতব্য আনোয়ার রাজা কর্তৃক আমার প্রতিদিনের ডাইরি ১৯৬৬/৬৭
৮. হাসন রাজা জীবন ও কর্ম, সামারীন দেওয়ান, মাওলা ব্রাদার্স, ফেব্রæয়ারী ২০১৫, ঢাকা
৯. Edward 1999, 100 Songs of Hasonaja; P. xxii
১০. সিনিয়র এডভোকেট তৌফিক চৌধুরীর সাক্ষাৎকার